আপনি কি বাঁচতে চান নাকি মরতে চান
বাংলাদেশে বাচতে হলে বিএনপিকে দেওয়ার মতো চাঁদার টাকা আপনার পকেটে আছে তো???
![]() |
বিএনপির নির্মমতা |
আপনি কি বাঁচতে চান নাকি মরতে চান?
একটি জাতি যখন তার নৈতিকতা হারায়, তখন সে শুধু স্বাধীনতা হারায় না—হারায় নিজের বেঁচে থাকার অধিকারও। ঠিক এমন এক মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছে আজকের বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মিটফোর্ডে দিনদুপুরে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে পাথর নিক্ষেপ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। সেই দৃশ্য ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে বিএনপির ছত্রছায়ায় থাকা যুবদলের কিছু নেতাকর্মী। কারণ? ভাঙারি ব্যবসায়ী তাদের দাবিকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকার করেছিলো।
এই প্রবন্ধের শিরোনাম—“আপনি কি বাঁচতে চান নাকি মরতে চান?”—শুধু একটি বাক্য নয়, এটি একটি চেতনার প্রশ্ন। একটি রক্তমাখা বাস্তবতা। আমাদের সবার ভেতরেই এই প্রশ্নটা জেগে ওঠা এখন সময়ের দাবি।
বিএনপির অতীত ও বর্তমান: সহিংসতার ধারাবাহিকতা
![]() |
্মিডফোর্ড হাসপাতালের পাশে বিএনপির হত্যাকান্ড |
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপির নাম শুনলেই যে কয়েকটি শব্দ স্বতঃস্ফূর্তভাবে উঠে আসে, তা হলো: দমন, পীড়ন, চাঁদাবাজি, এবং সন্ত্রাস। ২০০১–২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির শাসনামলে এদেশের মানুষ দেখেছে নির্যাতনের খেলা, প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব, এবং বিরোধীদলের কণ্ঠরোধ। এরপর দীর্ঘ বিরতিতে ক্ষমতার বাইরে থেকেও দলটি তাদের সহিংস রূপে বারবার ফিরে এসেছ। রাস্তা অবরোধ, আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারা, এবং সর্বশেষ—চাঁদার দাবিতে খুন।
একটি রাষ্ট্রে চাঁদাবাজি কীভাবে নৈমিত্তিক হয়ে ওঠে
যখন রাষ্ট্র দুর্বল হয়ে পড়ে, আইন থাকে শুধুই কাগজে, এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়া হয়ে ওঠে অপরাধীদের ঢাল। তখন চাঁদাবাজি আর সাধারণ অপরাধ থাকে না। তখন এটি হয়ে ওঠে “সংগঠিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস”। ব্যবসায়ীরা, সাধারণ দিনমজুর, এমনকি ছাত্ররাও আর নিরাপদ নয়। চাঁদা না দিলে দোকান ভাঙে, শরীরে পড়ে লাঠি বা পাথর।
ব্যবসায়ী সমাজ ও খেটে খাওয়া মানুষের নিরাপত্তাহীনতা
এই দেশের অর্থনীতি আজও বহুাংশে গড়ে উঠেছে ছোট ব্যবসায়ী, রিকশাওয়ালা, ভ্যানচালক, দিনমজুর, ভাঙারি ব্যবসায়ীদের কাঁধে। অথচ তারাই আজ সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে। “চাঁদা না দিলে বাঁচতে পারবি না”—এ যেনো প্রতিদিনের শুনতে হওয়া হুমকি। মিটফোর্ডের এই হত্যাকাণ্ড সেই নৃশংস বাস্তবতার নগ্ন চিত্র।
‘বাঁচা’ এবং ‘মরা’র ভেতরের অর্থ—শুধু শারীরিক নয়, নৈতিকও
প্রশ্ন উঠেছে—আপনি কি বাঁচতে চান নাকি মরতে চান? অনেকে ভাববেন, এই প্রশ্নটি শরীরগত বেঁচে থাকা কিংবা মৃত্যু নিয়ে। কিন্তু বাস্তবতা আরো গভীর। একটি মানুষ যদি প্রতিদিন অন্যায় দেখে চুপ থাকে, নিজের আত্মাকে প্রতিদিন বিক্রি করে দেয়—তাহলে সে কি বেঁচে থাকে আদৌ?
চুপ থাকা মানে, খুনি আর চোরকে প্রকারান্তরে সমর্থন করা। আজকের চুপ থাকাই কালকের হত্যার অনুমোদন।
জনগণের নীরবতা কিভাবে অন্যায়ের প্রশ্রয় দেয়
আমরা যারা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করি, যাদের লেখার শক্তি আছে, যাদের সামনে মাইক বা মোবাইল ক্যামেরা আছে—তাদের কণ্ঠ যতদিন নীরব থাকবে, ততদিন বিএনপির এই খুনীরা বেপরোয়া হয়ে উঠবে। একটি জনগোষ্ঠীর নীরবতা হচ্ছে খুনীদের জন্য সবচেয়ে বড় আত্মবিশ্বাস।
যে জাতি অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না, তারা ইতিহাসে নাম লেখায় না। তারা কেবল ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
তরুণ প্রজন্ম, শিক্ষক সমাজ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভূমিকা
আজকের তরুণরাই আগামী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। কিন্তু এই তরুণরাই যদি রাজনৈতিক দলে ভিড়ে চাঁদাবাজিতে মত্ত হয়, তাহলে জাতির আশা কোথায়? আর যারা শিক্ষা দেয়—শিক্ষক সমাজ, যদি অন্যায়ের বিরুদ্ধে না দাঁড়ায়? তাহলে শিক্ষার আলো নিভে যায়। মধ্যবিত্ত শ্রেণি, যারা বুদ্ধিজীবী ভাবেন নিজেকে, তারাও যদি শুধু নিরাপদ দূরত্বে বসে থাকেন, তাহলে এই অন্ধকার আরও ঘন হবে।
এই ঘটনার মাধ্যমে আমরা কী শিখছি?
আমরা শিখছি, চুপ থাকলে কেউ নিরাপদ নয়। আজ একজন খেটে খাওয়া ব্যবসায়ী মারা গেছে।আগামীকাল হয়তো তুমি বা আমি। আজ চাঁদা চাওয়া হচ্ছে দোকান থেকে—আগামীকাল হয়তো ঘর থেকে। আজকে কেউ পাথর ছুঁড়েছে—আগামীকাল সেটা হবে গুলি। এই নৃশংসতা শুধু রাজনৈতিক ব্যর্থতা নয়, এটি আমাদের নৈতিক পতনের প্রতিচ্ছবি।
আজ যদি আমি আপনি চুপ থাকি, কালও তাহলে এভাবে আরো একজন মরবে।
আপনি, আমি, আমরা—যদি চুপ থাকি, তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমরা রেখে যাবো শুধুই রক্তমাখা রাজপথ, সন্ত্রাসী দল আর ভাঙা স্বপ্ন। তাই আজকেই প্রশ্ন করতে হবে নিজেকে—“আমি কি বাঁচতে চাই, নাকি মরতে চাই?”
সাহস ও প্রতিবাদই এখন একমাত্র পথ
একজন লেখক, একজন সাংবাদিক, একজন নাগরিক, একজন পাঠক—যে যার অবস্থান থেকে যদি সত্য কথা বলে, তাহলে এই ভয়ংকর চক্র একদিন ভাঙবেই। আজ আমার লেখা এই প্রবন্ধ পড়ে যদি একজন মানুষও জেগে ওঠে, তাহলে সেটাই বড় বিজয়। সেটাই আমার বড় পাওনা।
আপনি কি চুপ থেকে চোর, খুনি ও চাঁদাবাজদের রাজত্ব মেনে নেবেন? নাকি কলম, কণ্ঠ আর কামের শক্তিতে বলবেন—“আর নয়, এবার প্রতিরোধ”?
পরিশেষে আবার আপনাকে প্রশ্ন করতে চাই—
আপনি কি বাঁচতে চান নাকি মরতে চান?
Comments
Post a Comment